Marquee

বাংলাদেশ একটি স্বাধীন দেশ। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বাঙালির জাতির পিতা। আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালবাসি। বাংলাদেশের মাটি, সোনার চেয়ে খাঁটি। MUHAMMAD SAIFUL ISLAM

Popular Posts

Wednesday, October 14, 2015

বর্ষা – কদম বন্দনা


বর্ষা – কদম বন্দনা


কদম ফুলকে বলা হয় বর্ষা ঋতুর হাসি। বৃষ্টির স্বচ্ছ জলে ধুয়ে-মুছে কদম ফুল হেসে উঠে পাতার আড়াল থেকে। প্রতিটি ঋতুতেই ফুলে ফুলে ভরে যায় প্রকৃতি। এসব নাম জানা বা অজানা ফুল প্রকৃতিকে সাজিয়ে তুলে অপরূপ সাজে, প্রকৃতি হয় নিরুপমা। এমনই একটি ঐতিহ্যবাহী বনফুল হচ্ছে কদম ফুল। বৃষ্টির পানিতে সিক্ত মোহনীয় ঘ্রাণে ভরপুর এই কদম ফুলকে নিয়ে বাংলা সাহিত্যে রচিত হয়েছে অসংখ্য ছড়া, কবিতা, গান ও উপন্যাস। কদম ফুলের সতেজ সৌন্দর্য আর মোহনীয় সুঘ্রাণে শুধু কবি-সাহিত্যিকরাই মুগ্ধ হন না, প্রতিটি বাঙালির মনেও সৃষ্টি করে ভিন্ন অনুভূতি, রয়েছে কদম ফুলের প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসা ও আকর্ষণ। হলুদ, শুভ্রতার সংমিশ্রণে গোলাকৃতির এই ফুল এখন কদম গাছে গাছে শোভা পাচ্ছে।
আষাঢ় ও শ্রাবণ এই দুই নিয়ে বর্ষাকাল। পৃথিবীর আর কোনো দেশে ঋতু হিসেবে বর্ষার স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য বা নাম নেই। বর্ষা ঋতু যেন শুধু বাঙালিদের ঋতু। কদম ফুলের স্নিগ্ধ ঘ্রাণ যুগে যুগে নগরবাসী কিংবা গ্রামবাসীকে মুগ্ধ করে এসেছে। তাই বর্ষা কবিদের ঋতু, নজরুল-রবীন্দ্রনাথের ঋতু। ‘বৃষ্টি ঝরুক আর নাই-বা ঝরে পড়ুক। বাদল দিনে প্রথম কদম ফুল ফুটুক আর নাই-বা ফুটুক, ১৫ জুন দিনটি ছিল পহেলা আষাঢ়। ময়ূর পেখম মেলুক আর নাই-বা মেলুক, আজ শব্দের পর শব্দ সাজিয়ে কবিতার খাতা, ডায়রির পাতা ভরে তোলার দিন। মেঘের ভেলায় ভেসে কদম ফুলের ডালি সাজিয়ে নব যৌবনা বর্ষার সতেজ আগমন ঘটে এই দিনে। কারণ, সেদিন দুপুরে হঠাত্ ঝরেছিল প্রবল বৃষ্টি। স্নাত করে দিয়েছিল শুষ্ক মাটির বুক, সিক্ত করে দিয়েছিল তৃষ্ণার্ত গাছপালা। বৃষ্টির শীতল স্পর্শ জুড়িয়ে দিয়েছিল তপ্ত হৃদয়। বৃষ্টির স্বচ্ছ পানি ভিজিয়ে দিয়েছিল আমাকে। আর আমি হাত বাড়িয়ে ছুঁয়ে দিয়েছিলাম বৃষ্টিকে!
কদম ফুলের সরস রূপে সেজে নগরে বর্ষা এসেছে। কদম ফুলের সুঘ্রাণ জানান দিয়ে যায় নবযৌবনা বর্ষার আগমনী বার্তা। কদম গাছগুলো সাদা-হলুদের মিশ্র রঙের ফুলে ছেয়ে গেছে। বর্ষা মানেই গুচ্ছ গুচ্ছ কদম ফুলের সুবাস। বর্ষা মানেই বৃষ্টির রিনিঝিনি কিংবা নূপুর-নিক্কণ ধ্বনি। কবিতার ভাষায়—
‘বাদল দিনের প্রথম কদম ফুল করেছ দান
আমি দিতে এসেছি শ্রাবণের গান।’
রবীন্দ্রনাথের বর্ষার এ আবেগময়, প্রেমসিক্ত গান শুধু বাঙালিদের জন্য প্রযোজ্য। বর্ষাবিহীন বাংলাদেশ ভাবাই যায় না। বর্ষা ঋতু তার বৈশিষ্ট্যের জন্য স্বতন্ত্র। বর্ষার কোনো জুড়ি নেই। বর্ষা ঋতু কাব্যময়, প্রেমময়। বর্ষা কবিদের ঋতু, কবিতা-গানের ঋতু, আবেগের ঋতু, প্রিয়জনের সান্নিধ্য পাবার আকাক্ষার ঋতু। তাই তো বর্ষা প্রবল বর্ষণে নির্জনে ভালোবাসার সাধ জাগে, চিত্তচাঞ্চল্য বেড়ে যায়, ব্যথিত-বঞ্চিত-নিঃসঙ্গ জীবন প্রেম সুধায় ভরিয়ে দেয়ার সাধ জাগে। শত অনাকাক্ষিত ঘটনার ভিড়েও কোথায় যেন মিলে এক চিলতে বিশুদ্ধ সুখ! কদম ফুলের মতো তুলতুলে নরম, রঙিন স্বপ্ন দু’চোখের কোণায় ভেসে উঠে ঠিক যেমন করে আকাশে সাদা মেঘ ভেসে বেড়ায়। কদমের সুঘ্রাণে তৃপ্ত করতে ইচ্ছে হয় কোন তৃষিত হৃদয়। তাই বর্ষা রবীন্দ্রনাথের প্রিয় ঋতু। তাই তো বর্ষাকে নিয়ে রচিত হয়েছে এত কবিতা, এত ছড়া-গান, এত গল্প-উপন্যাস। রবীন্দ্রনাথের ‘বর্ষামঙ্গলে’ ও কালিদাসের ‘মেঘদূত কাব্যের কথা উল্লেখ না করলে বর্ষা ঋতুর স্বাদই অপূর্ণ থেকে যাবে। রবীন্দ্রনাথের ‘গীতবিতান’র পাতায় পাতায় ভরে আছে বর্ষার ঘনঘটা, গুরুগম্ভীর বৃষ্টির কথা।
রোমান্টিক ঋতু বর্ষাকাল এবং এই ঋতু বাঙালির একান্ত নিজস্ব। ‘বর্ষণমুখর সন্ধ্যা বা বৃষ্টিভেজা রাত আমার দেশ ছাড়া পৃথিবীর আর কোথাও কি মিলবে? শীতপ্রধান দেশে বা পৃথিবীর অন্য দেশের কবিরা বর্ষার সঙ্গে পরিচিতই না। তাই বর্ষার কদরও তারা জানেন না। যেমন আমাদের বাঙালি কবিরা বর্ষায় কাব্য রচনায় নিমগ্ন থেকেছেন। তাই তো কবিগুরু বলেছেন—
‘এমন দিন তারে বলা যায়
এমন ঘনঘোর বরিষায়।’
এমন ঘনঘোর বরষায় প্রিয়জনকে না বলা কত কথাই না বলার কবির মনে সাধ জাগে। কবি তাই তো বর্ষণমুখর দিনে মনের জমানো কথা বলিতে ব্যাকুল। আষাঢ়-শ্রাবণে বর্ষার অশ্রু প্লাবনে প্রকৃতি হয়ে উঠে সরস-শ্যামল। প্রবল বারিধারায় চারপাশ সতেজ ও প্রাণবন্ত হয়ে জেগে উঠে। তাই তো কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের মনও জেগে উঠেছে। কবির মনও উতলা—
‘পাগলা হাওয়ার বাদল দিনে
পাগল আমার মন জেগে উঠে।’
গোধূলির পর অজস্র করুণার অমৃতধারার আবির্ভাব হয়। মেঘ-মাধুর্যে পরিপূর্ণ আকাশটাও সঙ্গীতের অপূর্ব সুর-মূর্ছনায় ঝঙ্কৃত হয় বৃষ্টি ঝরার তালে তালে। সেই রিনিঝিনি বৃষ্টির ধ্বনি মনের কিনারা ছুঁয়ে কী এক অজানা অনুভূতি স্বপ্ন জাগিয়ে তুলে। মনের আকাশটাও তাই মেঘ-মাধুর্যের সৌন্দর্যে কোমল ও সিক্ত হয়।
আঁধারের আঁচলে সূর্যের চোখ বেঁধে রেখে মেঘ আর সূর্যের লুকোচুরি খেলার মাধুর্যময় দৃশ্য অনির্বচনীয়। তাই তো এসব দৃশ্য অবলোকন করে কবির অশান্ত হৃদয় উতলা হয়েছে, জেগে উঠেছে মুগ্ধতায়। আর কবির সঙ্গে একাত্ম হয়ে, প্রকৃতির রূপে নিজেকে হারিয়ে অনেক ভাবুক মন খুঁজে বেড়াচ্ছে স্বপ্নের খেই। তাই বাধ্য হয়ে কলম নিয়ে বসতে হলো কদম ফুল আর সুজলা-সুফলা, নবযৌবনা বর্ষার বন্দনা করতে।
কদম গাছের শাখে পাতার আড়ালে ফুটে থাকা অজস্র কদম ফুলের সুগন্ধ লোকালয় পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ছে। আর তাই তো কদম ফুলকে বলা হয় বর্ষার দূত। কদম ফুলের আরেকটি নাম হচ্ছে নীপ। কদম ফুলের সৌন্দর্যের মতোই আরও কিছু চমত্কার নাম রয়েছে। বৃত্তপুষ্প, সর্ষপ, ললনাপ্রিয়, সুরভী, মেঘাগমপ্রিয়, মঞ্জুকেশিনী, কর্ণপূরক, পুলকি—এসবও কদম ফুলের নাম। কদম নামটি এসেছে সংস্কৃত নাম কদম্ব থেকে। কদম্ব মানে হলো ‘যা বিরহীকে দুঃখী করে’। প্রাচীন সাহিত্যের একটি বিশাল অংশজুড়ে রয়েছে কদম ফুলের আধিপত্য। মধ্যযুগের বৈষ্ণব সাহিত্যেও কদম ফুলের সৌরভমাখা রাধা-কৃষ্ণের বিরহগাথা রয়েছে। ভগবত গীতাতেও রয়েছে কদম ফুলের সরব উপস্থিতি। কদম ফুল শুধু বর্ষায় প্রকৃতির হাসি নয়, এর রয়েছে নানা উপকারিতা। কদম গাছের ছাল জ্বরের ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। কোনো কোনো অঞ্চলে কদম ফুল তরকারি হিসেবে রান্না করেও খাওযা হয়। কদম গাছের কাঠ দিয়ে দিয়াশলাই তৈরি করা হয়ে থাকে।
বর্ষায় প্রকৃতির সতেজ-সজীব রূপ-রস যুগ যুগ ধরে মানুষের হৃদয় জয় করে এসেছে। বর্ষাকালে বৃষ্টির পানি সব আবর্জনা ধুয়ে-মুছে পরিষ্কার করে। বন্যার পানি পলিমাটি বয়ে এনে দেশকে করে সুজলা-সুফলা। তাই তো বর্ষা ঋতু এত কাব্যময়, প্রেমময়, ঐশ্বর্যশালী। তাই বর্ষাকাল বাঙালির এত প্রিয়।


Collector : MD. SAIFUL ISLAM SAIF
 

No comments:

Post a Comment